বিদেশ ডেস্ক ॥ ইরান পরমাণু অস্ত্রসহ যে কোনো অপ্রচলিত অস্ত্র তৈরির চেষ্টা কখনোই করেনি এবং আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএর প্রতিবেদনগুলোতে বহুবার এ কথার উল্লেখ রয়েছে। ইরান সম্প্রতি ৬০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রচলিত পরমাণু কর্মসূচি সংক্রান্ত নীতিমালার লঙ্ঘন তো নয় বরং তা বৈধ ও শান্তিপূর্ণ লক্ষ্যে পরিচালিত। ইরানের এ পদক্ষেপ শান্তিপূর্ণ পরমাণু তৎপরতার ক্ষেত্রে দেশটির নিজস্ব সক্ষমতা ও শক্তির স্বাক্ষর। যদিও কোনো কোনো দেশ ইরানের এ সক্ষমতাকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ এ অঞ্চলে তাদের মিত্র আরো কিছু দেশ ইরানের নাথাঞ্জ পরমাণু স্থাপনায় ইসরাইলের সাইবার হামলার ব্যাপারে নীরব থাকলেও ৬০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের ঘোষণা পর তারা এটাকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে অভিহিত করেছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাইয়্যেদ খাতিবযাদেহ সমালোচকদের ইরান বিরোধী দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যের জবাবে বলেছেন, ভিয়েনায় পরমাণু সমঝোতা নিয়ে চলমান আলোচনাকে বিঘ্নিত করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। আরব লীগ ও পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ বা পিজিসিসির পক্ষ থেকে উত্থাপিত পরিকল্পনার ব্যাপারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরো বলেছেন, এসব জোটের মহাসচিবদের এটা জেনে রাখা উচিত যে ইরান আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএর সদস্য এবং দেশটির সমস্ত পরমাণু কার্যক্রম ওই সংস্থার তত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। আর এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের সম্প্রসারণ ইরানের অধিকার এবং তা জাতীয় স্বার্থে শান্তিপূর্ণ লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। সাইয়্যেদ খাতিবযাদেহ আরবলীগ ও পিজিসিসি মহাসচিবদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ইসরাইলের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইরানের বিরোধিতা করার পরিবর্তে তাদের উচিত এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি ইসরাইলের পরমাণু অস্ত্রের দিকে নজর দেয়া। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরানের ৬০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিষয়ে পাশ্চাত্যের হৈ চৈ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে পরমাণু ক্ষেত্রে ন্যায্য অধিকার থেকে ইরানকে বঞ্চিত করা। ইরানের আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোস্তফা খোশ চাশম মনে করেন, বাস্তবতা হচ্ছে দখলদার ইসরাইল নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টিকারী নানা পদক্ষেপ নিয়ে এ অঞ্চলে সংঘাত সৃষ্টি করে সারা বিশ্বকে ইরানের বিরুদ্ধে দাড় করানোর চেষ্টা করছে। প্রকৃতপক্ষে, ইরানের শত্রুরা নানা মিথ্যা প্রচার করে পরমাণু সংক্রান্ত আলোচনা ব্যর্থ করে দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। আর সে ব্যর্থতাকে আড়াল করার জন্য তারা ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে হুমকি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। বর্তমান যুগের চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার হল পরমাণু চিকিৎসা। চিকিৎসা এবং রোগ নির্ণয় উভয় ক্ষেত্রেই এর প্রয়োগ হয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানের রোগের চিকিৎসা এবং রোগ নির্ণয়ে পৃথক পৃথক রেডিওমেডিসিন ব্যবহৃত হয়। ইরান যে ৬০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করণের কাজ শুরু করেছে তা আরো উন্নত রেডিওমেডিসিন তৈরিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে। পরমাণু অস্ত্র উৎপাদন ও বিস্তার রোধ সংক্রান্ত এনপিটি চুক্তির চার নম্বর ধারা অনুযায়ী পরমাণু প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের অধিকার ইরানের রয়েছে। তবে ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাকচি বলেছেন, নাথাঞ্জ পরমাণু কেন্দ্রে ইসরাইলের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ইরানের পরমাণু কার্যক্রমকে আরো শক্তিশালী করার সুযোগ এনে দিয়েছে।
Leave a Reply